আদনান মেন্দেরেস : প্রথম আজানের শহীদ

 


১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ, তুরস্ক।

খেলাফতের যে ভূমিতে তখন আরবীতে আযান নিষিদ্ধ মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের এক সিদ্ধান্তের কারণে। এটা এমন এক সিদ্ধান্ত যা তুর্কীদের বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল। এমনই একসময়ে আবির্ভাব ঘটলো আদনান মেন্দেরেস এর (১৯৫০-১৯৬০ খ্রি.)।

১৮৯৯ সালে তুরস্কের আইদিন প্রদেশের কোচারলিতে, ক্রিমিয়ান বংশোদ্ভূত এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে আদনান মেন্দেরেস জন্ম গ্রহণ করেন। গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন আনকারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি গ্রিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এ জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পদকও লাভ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি নামে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। দলটির বিলুপ্তির পর ১৯৩১ সালে কামাল আতাতুর্কের আমন্ত্রণে রিপাবলিকান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪৫ সালে দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।

আর এ সময় তিনি প্রবলভাবে ধর্ম-কর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন, অথচ ইতঃপূর্বে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর একজন সেক্যুলার।

ইসলামিস্ট না হওয়া সত্ত্বেও সেক্যুলারদের দৌরাত্মকে কমিয়ে আনার দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে তুলে নেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৪৬ সালের ৭ জানুয়ারি আদনান মেন্দেরেস ও জালাল বায়ার ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কুতাহিয়ার ডেপুটি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে যখন সমস্ত সম্ভাবনা তার অবশ্যম্ভাবী পরাজয়ের দিকে ইঙ্গিত করছিল তখন আদনান মেন্দেরেস নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় অর্জন করলেন।
১৯৫৪১৯৫৭ সালের নির্বা‌চনেও তিনি জয়ী হন। তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচিত হওয়ার পর সেই বছরের রমজানের শুরুতে পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলো। যেখানে তিনি তূর্কী জাতিকে একটি উপহার দিলেন। আরবী ভাষায় আযান। আদনান খুব দ্রুত তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে লাগলেন। তূর্কীদের হজ্জের অনুমতি দিলেন। আরবী ভাষা শিখতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে লাগলেন। ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালনের স্বাধীনতা দিলেন। নারীর পোষাক নির্ধারণে রাষ্ট্রের কতৃত্ব সীমিত করলেন।

তার ১০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে তুরস্কের অর্থনীতি বার্ষিক ৯% হারে বৃদ্ধি পায়। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তৎপর ছিলেন তিনি। তার সুষম অর্থনৈতিক নীতির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। হিজাব পরিহিতাদের দমন নিপীড়ন বন্ধ করা সহ, তুরস্ককে অর্থনৈতিভাবে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে লাগলেন আদনান। কিন্তু ২৬ মে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তার এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো যখন সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাকে গ্রেফতার করলো।

এর কিছুদিন পরেই সেক্যুলার সিস্টেমকে পরিবর্তন করা সেই সাথে তুরস্কের সংবিধান লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়। তন্মধ্যে অন্যতম একটি অভিযোগ ছিল আরবি ভাষায় আযান চালু করা। ১৯৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মারমারা সাগরের জনমানবহীন ইমরালি দ্বীপে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আদনান মেন্দেরেসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আযানের শহীদ' উপাধি নিয়ে তিনি আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমান।



সূত্র: ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া


Post a Comment

0 Comments