ড. ইসরার আহমেদ (রহঃ) সমকালীণ যুগে কোরআন বিশ্লেষকদের অন্যতম। পাকিস্থানি এই মনিষী তার শুরুর জীবনে মাওলানা মওদূদীর (রাহ:) সাথে জামায়াতে ইসলামিতে অতিবাহিত করেছেন। তার একশোরও বেশী কিতাব পাওয়া যায়, এছাড়া অনেক মুহাদারাহর রেকর্ড ইউটিউবে ছড়িয়ে আছে। ক্বিয়ামাতের আলামত, জিহাদ, খেলাফত ব্যবস্থা, রাসুলের দাওয়াতী জীবন ইত্যাদি বিষয়ে ডক্টরের লম্বা হাত। ২০১০ এর শুরুর দিতে এই মহান মনীষী মৃত্যুবরণ করেন। রেখে গিয়েছিলেন হাজারো রূহানী সন্তান।
এই বক্তব্যে তিনি ইসলামের কোন ভার্সনটি আমেরিকা ও পশ্চিমের অনুকূলে আর কোনটি তাদের জন্যে হুমকি স্বরূপ সে বিষয়ে বেশ চমৎকার আলোচনা করেছেন।
তার মুখেই শুনা যাক -
রেন্ড কর্পোরেশন অফ আমেরিকা সদ্য একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যা বেশ উঁচু লেভেলের থিংকট্যাংক। যাদের পরামর্শ আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ আমলে নেয়। তাদের রিপোর্টে মুসলিমদের চার প্রকারে ভাগ করা হয়েছে ।
প্রথম প্রকার, সে সমস্ত লোক যারা ইসলামকে জীবনব্যবস্থা মনে করে। ধর্ম হওয়া ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থাও মনে করে। ধর্ম, বিশ্বাস ও প্রথা ঠিকাছে । তবে এর সাথে সাথে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থাও মনে করে। এরা হলো আমাদের প্রথম শত্রু। যে কোনভাবেই হোকনা কেন আমাদের তাদেরকে ধ্বংস করতেই হবে। কেননা আমরা আমাদের বিরোধী কোন সিস্টেমকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিতে পারিনা।
একটু চিন্তা করে দেখুন, চল্লিশ বছর জুড়ে যে স্নায়ুযুদ্ধ চললো তা তো কেবল সিস্টেমের যুদ্ধ ছিল। ধর্মযুদ্ধের তো নামও ছিলনা। পশ্চিমের সবাই ছিল খ্রিষ্টান আর রাশিয়ানরা কি ছিল? কাযাকস্থান ও অন্যান্য কিছু মুসলিম দেশ ছাড়া সোভিয়েতেরও প্রায় সব দেশ খ্রিষ্টান ছিল। এই যুদ্ধে ধর্মের কোন গন্ধও ছিলনা। সিস্টেম ছিল মূলকারণ। আমাদের পুঁজিবাদী সিস্টেমের বিরুদ্ধে এই কম্যুনিস্ট সিস্টেম বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। না সহ্য করা যাবেনা। তো চরমপন্থীদের ব্যাপারে তাদের পলিসি একদম পরিষ্কার। আমাদের তাদেরকে ধ্বংস করতেই হবে।
দ্বিতীয় প্রকার হলো, ঐতিহ্যবাদী মুসলমান। ঐতিহ্যবাদি ওলামা। এরা নিজস্ব মসজিদ মাদ্রাসায় কুরআন হাদীস নিয়ে সীমাবদ্ধ আছেন। এরা নিজেরা অতটা ভয়ংকর নয়। কিন্তু এরা যদি চরমপন্থীদের সাথে মিলে যায় তাহলে খুব বেশী ভয়ংকর হয়ে উঠে। কেননা এদের সাধারণ মানুষের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি জুমায় তাদের সমাবেশ হয়। ছোট সমাগম করতেও আপনার কত কসরত করতে হয়, পোস্টার প্রচার করতে হয়, কতভাবে প্রচারণা চালাতে হয় এরপরও কয়জন আসবে? দুইশো চারশো চলে আসলেও অনেক।
আর এখানে মানুষ নিজেরা গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে, আতর লাগিয়ে চলে আসছে। তো এরা চরমপন্থীদের সাথে মিলে গেলে খুব বেশী ভয়ংকর হয়ে যায়। তো এদেরকে পরস্পর থেকে দূরে রাখতে হবে। আর এদের মধ্যকার মতভিন্নতাকে উসকে দিতে হবে। যাতে এই ঐতিহ্যবাদিরা এক শক্তিতে পরিণত হতে না পারে।
তৃতীয় প্রকার হলো, আধুনিকমনা মর্ডানিষ্ট। যারা ইসলামকে পশ্চিমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে ব্যাখ্যা করে। এই যে, পশ্চিমা সভ্যতার সাথে মিলিয়ে ইসলামের পুনর্ব্যাখ্যা হচ্ছে তারা বলে এটাই হলো কাজের কাজ। আমাদের এদেরকে সাপোর্ট ও সাহায্য করা উচিত। আর মিডিয়ায় এদের উপস্থিতিকে বড় করে দেখানো উচিত। কেননা মর্ডানিষ্টদের তো আর কোন মাধ্যম নেই। মসজিদে কে তাদেরকে ডুকতে দিবে? কে তাদের পিছনে নামাজ পড়বে? কে তাদের খোতবা শুনবে? জুতা মারামারি শুরু হবে। একারণে এদেরকে মিডিয়ায় সুযোগ দাও। আর সেই অনুযায়ীই করা হচ্ছে।
আর তারা চতুর্থ প্রকার বললো, সাধারণ মুসলিম জনগণ। এরা তো আমাদেরই লোক। এদের ব্যাপারে কোন কিছু বলার নেই। এরা তো শুধু এটুকু ধারণা করে যে, ইসলাম শুধু নামাজ, রোজা, হজ্জ, আকায়েদ ও যাকাতের নাম। আকীকা, বিয়েতে কবুল বলা, মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন এগুলোই। ব্যস এগুলো তো করতেই পারে। এসবে আমাদের সাথে তাদের বিরোধ নেই। তারা এই ধর্মকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থাও মনে করেনা। সেক্যুলার।
অতএব শেষ দুই প্রকারকে সাপোর্ট কর, আর প্রথমোক্ত দুই প্রকারের বিরুদ্ধে যা করার কর। সদ্যই এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আমেরিকান সরকারকে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এইসব পাশ্চাত্যের ফেতনা থেকে মুক্ত রাখুক। আমিন।
0 Comments