প্রতিষ্ঠাঃ গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইসলামি এই প্রতিরোধ আন্দোলন এর প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৭ সালে, প্রথম ইন্তিফাদার মাধ্যমে। হামাস এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন শহীদ শেখ আহমেদ ইয়াসিন (রাহ:) যাকে নিয়ে আমি গত পোস্টে বিস্তারিত লিখেছি।
প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত যখন সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেন তখন ১৯৮৮ সালে গৃহীত হয় “হামাস চার্টার” যার লক্ষ্য হলো অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো।
সংগঠন হিসাবে হামাসঃ
সংগঠন হিসেবে হামাস মূলত তিনটি শাখার সমষ্টিঃ রাজনৈতিক শাখা, সমাজকল্যাণমূলক শাখা এবং সামরিক শাখা। মজলিশে শূরা হামাসের প্রতিনিধিদের মিলনস্থল, যার মাধ্যমে হামাস সমগ্র ফিলিস্তিনে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে হামাসের নীতিনির্ধারণী পরিষদ হলো পনেরো সদস্যের “পলিটিক্যাল ব্যুরো”। বর্তমানে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধাণ হলেন খালেদ মিশাল; আর দলীয় প্রধান হিসেবে রয়েছেন ডঃ ইসমাইল হানিয়া।
ছবিঃ ড: ইসমাইল হানিয়া
হামাসের সামাজিক কর্মকাণ্ডঃ-
সবসময় ঘর ভাঙ্গা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় হামাস। ইসরায়েলী বিমান হামলা কোন ঘর বিদ্ধস্ত হলে ১৫মিনিটের মধ্যেই সরকারী সেবাদানকারী মানুষেরা (উদ্ধারকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশ) চলে আসেন তাদের সাহায্যার্থে। এছাড়া ইসরাইলী আগ্রাসনে শহীদ হওয়া ফিলিস্তিনীদের পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য এককালীন ও নিয়মিত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে হামাস (যার পরিমান ৫০০ থেকে ৫০০০ ডলার হয়ে থাকে)। এছাড়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি ঘর, স্কুল বা মসজিদ পুনঃনির্মাণে সহায়তা দিয়ে থাকে হামাস।
যদিও হামাস মূলত একটি ইসলামী আন্দোলন হিসেবে কাজ করে, কিন্তু জোরপূর্বক কাউকে ইসলামী অনুশাসন মানতে বাধ্য করবার কোন নজির এখানে নেই। হামাস সরকারের দাওয়াহ মন্ত্রনালয়ের অধীনে ‘ফাদিলা’ বা ‘Virtue Committee’ নামে কিছু নাগরিক কমিটি আছে, যারা বিভিন্নভাবে জনসাধারণকে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে আহবান জানায়, অনুরোধ করে।
সামরিক শাখাঃ
হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জদ্দিন আল ক্কাসাম ব্রিগেড যাকে সংক্ষেপে আল ক্কাসাম ব্রিগেড বলা হয়। এটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং তখন থেকেই ইসরায়েলকে সামরিকভাবে তটস্থ করে রেখেছে তারা। সীমিত সাধ্যের মধ্যেও লিমিটেড টেকনোলজী আর অর্থায়নে ক্কাসাম রকেট দিয়েই ইসরায়েলি বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের আয়রন ডোম অ্যান্টিমিসাইল সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ইসরায়েলের প্যাট্রিয়ট মিসাইল এবং এফ-১৬ এর মোকাবেলায় ক্কাসাম ব্রিগেডের ব্যবহার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে স্বল্প মাত্রার আল বানা, আল বাতার এবং আল ইয়াসিন রকেট, এছাড়াও ট্যাংক বিধ্বংসী গোলাসহ কিছু হালকা যুদ্ধাস্ত্র। সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরের তলদেশ দিয়ে ইসরায়েলে পৌছে এক দুঃসাহসিক কমান্ডো অভিযানের চেষ্টা চালায় হামাস যোদ্ধারা। ইরানের পর মুসলিম দেশ হিসেবে সাফল্যজনকভাবে ড্রোন তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে হামাস, যা তেলাবিবের আকাশ পর্যন্ত পৌছে গিয়েছে। তবে হামাস যোদ্ধারা গ্রাউন্ড কমব্যাটে যথেষ্ট প্রশিক্ষিত। প্রবাসী হামাস নেতা খালিদ মিশালকে হত্যার একাধিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলো ইসরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং সিনবেথ, তবে হামাসের অপারেটিভদের সাহস এবং দৃঢ়তায় তারা সফল হতে পারেনি।
ইজরাইলের সবচেয়ে বড় শত্রু হামাসঃ
ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন-হামাস ফিলিস্তিনীদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ যাকে ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু বলা হয়।ইসরাইলী পররাষ্টমন্ত্রনালয়ের খবর অনুযায়ী, দ্বিতীয় ইন্তিফাদা অর্থাৎ দ্বিতীয় বিপ্লবের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শুধু হামাস গোষ্ঠীই অসংখ্য হামলা চালিয়েছে ফলে শত শত ইসরাইলীর প্রাণহানী ঘটেছে এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে৷ ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে হামাস গোষ্ঠী ফিলিস্তিনী জনসাধারণের ব্যাপক সমর্থন লাভে সক্ষম হয়৷ ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মাঝে হামাসই এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি হামলা চালিয়েছে- যাতে বহু ইসরাইলী নিহত হয়েছে৷
পালটা ইজরাইলি হামলায় হামাসও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ইজরাইলি হামালায় হামাসের দুইজন প্রধান সহ অসংখ্য কমান্ডার ও যোদ্ধা শহীদ হয়েছে দীর্ঘ যুদ্ধে। মোসাদের গুপ্ত হামলায় শহীদ হন হামাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ও সহযোগী। তবু থেমে নেই হামাস। সর্বশেষ গাজা যুদ্ধে হামাসের গাজা সিটি কমান্ডার বাসেম ঈসাসহ দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা শহীদ হয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিউজ অনুযায়ী চলতি যুদ্ধে হামাসের ৩০ জন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার শহীদ হয়েছেন।
হামাস বিতর্কঃ হামাসের ব্যপারে অনেকেই অনেক মত পোষণ করে। বাস্তবে হামাস ইজরাইলের বন্ধুতো নয়ই বরং সবচেয়ে বড় শত্রু। যারা হামাসকে শিয়া বলে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা মূলত ইজরায়েলের গুপ্ত এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই করছেনা। কেননা গাজা সুন্নী মুসলমানদের অধিকৃত অঞ্চল আর হামাস সেখানকারই সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গ্রুপ। অতীতে ইংরেজরা যেমন এদেশের মুসলমানদের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে নিজেরা ফায়দা হাসিল করেছে এখনো তেমন চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছে ইসলামের দুশমনরা।
হামাসের প্রতিটি রকেট হামলায় ইজরাইলের কত ক্ষতি হচ্ছেঃ
জেরুজালেম পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ উজি রুবিন বলেন, হামাসের রকেট ধ্বংস করতে আয়রন ডোমের একেকটি ক্ষেপণাস্ত্রে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ডলার ব্যয় হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, হামাস সোমবার পর্যন্ত তিন হাজার ১০০ রকেট ছুড়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন্নি গানজ বলেন, ১০ মে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর রকেট ভূপাতিত করতে আয়রন ডোম এক হাজার ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করেছে।
কল্পনা করতে পাড়ছেন কত বিশাল অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে শুধু রকেট হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে?
ইজরাইলি সেনা সূত্র অনুযায়ী ১ হাজার ইন্টারসেপ্টের দাম কত হয় একটু বের করে নেন!!
১০০০× ৫০০০০/১০০০০০ ডলার=??
শেষকথাঃ
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা,দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সীমাহীন আত্নত্যাগ, সততা – দক্ষতা ও নিপীড়িত মানুষের মধ্যে থেকে তাদের পাশে দাড়ানোর পাশাপাশি তাদের জন্য আমরণ লড়াইয়ের অদম্য মানসিকতাই হামাসকে দাঁড় করিয়েছে এক অনন্য অবস্থানে; শুধু ফিলিস্তিনীদের হৃদয়ে নয় বরং সারা বিশ্বের মজলুম সংগ্রামী মানুষের মধ্যে। আসুন আমরা ফিলিস্তিনের মর্দে মুজাহিদ হামাসের ভাইদের জন্য আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলি আর মুনাফিকদের বর্জন করি।
১) উইকিপিডিয়া
২)ডয়েচ ভেলে
0 Comments