হঠাৎ এক প্রকার বেলের আওয়াজে শঙ্কিত হয়ে উঠলো উমার। পরক্ষণেই শব্দটিকে পরিচিত মনে হতেই চেহারায় নেমে এলো রাজ্যের উৎকন্ঠা। মনে প্রাণে দোয়া করতে লাগলো, "আল্লাহ! এই শব্দ তুমি আমার বাচ্চাদের কানে দিওনা"। কেনইবা সে এই দোয়া করবেনা? মহল্লার প্রত্যেক উপার্জনক্ষম লোকই এখন এই দোয়া করছে। কারোরই এখন তেমন আয় নেই। সামনের ওয়াক্তে কি খাবে তার ঠিক নেই। আর এইরকম কঠিন সময় এই ব্যাটা আকর্ষক সব শব্দ করে ছেলেপেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের ক্ষুধা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শব্দটা মূলত একজন বিক্রেতার কাছ থেকে আসছে। সে ফলের গাড়ি নিয়ে একটু উপার্জনের আশায় বের হয়েছে। তাও আবার কারফিউ ফাঁকি দিয়ে। যদিও এখন কারো ফল কেনার মতো পরিস্থিতি আছে কিনা তা বোঝা মুশকিল। শহরের চারপাশে মিলিশিয়ারা ঘেরাও দিয়ে আছে। যখন তখন শুরু হবে শত্রুর ঘাটির নাম করে সাধারণ বাসিন্দাদের বাড়িতে বোমা ফেলা। সারা পৃথিবী যখন ব্যাপক আয়োজন করে জনসংখ্যা সমস্যা, নারী অধিকার, সমকামীদের প্রতি সহানুভূতি মূলক ইত্যাদি সেমিনার করে, রেডিওতে এইসব শুনে ওমরদের মতো প্রত্যেক মজলুম ব্যক্তির গা জলে উঠে। মন চায়, যারা এই সব অদ্ভুতুরে ব্যাপারে বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে চায় ওদেরকে এক এক করে পিষে মারতে। 'কি আশ্চর্য!! এদিকে আমরা যারা নিয়মিত দখলদারদের বোমা- গুলির আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছি তাদের নিয়ে বিশ্ববাসীর কোনো চিন্তা নেই। তারা দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনার ভান করছে।' এইসব ব্যপারগুলো নিত্য ভাবায় ওমারের মতো আরো সিরিয়ানদের। মুসলিম দেশগুলর কথা চিন্তা করর ওমার। তারা একেকজন থাকে রাজা বাদশাহর হালে। তারা ঘুম থেকে উঠে আজান শুনে। অতঃপর মাসজিদে গিয়ে নামায শেষ করেই লিপ্ত হয় বাহাসে। সবাই সবার ভুল ধরে। কিন্তু কেউ কারো মুখোমুখি হয়না। নিজের মতের বিপক্ষে গেলেই কাফের ফতোয়াও দেওয়া হচ্ছে আলেম! ভাড়া করে। অথচ এদিকে যে মুসলিমরা মার খাচ্ছে তার ব্যপারে তাদের কোনো মাথাব্যথাই নেই। এইসব তর্ক বিতর্ক নতুন না। নিজের দেশের কথাই ভাবে ওমার। আর ওমাররাও ঘুম থেকে উঠে, তবে বোমার শব্দে। একটা সময় তারাও একই রকম ভাবে নিজেদের নিয়ে নিজেরা এরূপ দলাদলির কাজে লিপ্ত ছিল। কিন্তু জালিমের বোমা তাদের মধ্যে কে শিয়া কে সুন্নি কে শাফেয়ী আর হানাফী তা দেখেনি। মুসলিম পরিচয় পাওয়া মাত্রই জুলুম শুরু করে দিয়েছে। এখনো ওর স্পষ্ট মনে আছে, সেই বিখ্যাত হানাফী ফতোয়াবাজ 'আতিফ আল আনসারী' যে ছিল শাফেয়ীদের যম, তার বাড়ির উপর যখন বোমা পরলো তখন তার প্রতিবেশী শাফেয়ী আলেম 'শায়খ ইয়াজ্জুদ্দীন' তাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতপ্রায় টেনে বের করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলো। দীর্ঘ শুশ্রূষার পর চোখ মেলে উদ্ধারকারীর পরিচয় জেনে বিড়বিড় করে কি যেন বলে কাঁদতে কাঁদতে নিজের দাড়ি ভিজিয়ে ফেললো। কৃতজ্ঞতা বশে নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির নিরসন ঘটিয়ে ফেললো। কিন্তু এখন নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে কি লাভ? অলরেডি নিজদের ভূখণ্ডে নিজেরাই নির্যাতিত হয়ে পরে আছে। বাহিরের সাহায্য যা আসে তা নামকাওয়াস্তে। এসব ভাবতে ভাবতে তিক্ত হাসি ফুটে উঠলো ওমারের মুখে। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে কি চলছে তা ভাল করে বুঝা হয়ে গেলো তার। এবং এর পরিণাম সম্বন্ধেও সে প্রাক্টিক্যালি অবগত। নিজদের দোষে নিজেরাই খেলাফত হারালাম। এখন আবার হয়েছি সারা বিশ্বের করুণার পাত্র। ঈমানটা ছাড়া আর কি আছে মুসলমানদের তা ভাবতে গিয়ে জীবনের অঙ্কটা গুলিয়ে ফেলার যোগাড়। তবে উমারের মতো আরো সিরিয়ানরা হতাশ হবার নয়। তারা জানে আল্লাহর সাহায্য সমাগত। পৃথিবীর কেউ না দেখলেও আল্লাহ কিন্তু ঠিকই দেখছেন। তিনি তার বান্দাদের ঈমানিয়াহর জোর দেখার জন্য প্রিয় বান্দাদের নিত্যনতুন পরীক্ষায় ফেলছেন এবং ওমারের মতো বান্দারা নিয়মিত সেই পরীক্ষায় ধৈর্য ধারণ করে তাদের রবের প্রিয়পাত্র হচ্ছেন। আর আমরা আছি বিখ্যাত সব প্রশ্ন নিয়ে। শায়খ অমুক দল তমুক দল খারেজী কিনা? গায়েবানা জানাজা হালাল না হারাম? গালি দেওয়ার বিধান কি ইত্যাদি সব অপয়ায়েংক্ত হওয়া সব প্রশ্ন নিয়ে।
মহান আল্লাহ তার দ্বীনের জন্য আমাদের কবুল করে নিক। আমিন।
২৫/০৬/২০২০
ইদলিববাসীর আত্নসমালোচনা
আব্দুল্লাহ আল রাইহান
0 Comments